হজ্জের সূচনা হয় কবে ?

ভূমিকা:

হজ্জ শুধু একটি ধর্মীয় রীতি নয়, এটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ এবং হাজার হাজার বছরের ইতিহাস বহন করে। অনেকেই জানতে চান—হজ্জের সূচনা হয় কবে? কে ছিলেন প্রথম হজ্জ আদায়কারী? কীভাবে হজ্জ আমাদের জীবনে এত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠল? আজকের এই লেখায় আমরা সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে দেখব।

১. হজ্জের সূচনা: ফেরেশতা না হযরত আদম (আ)?

ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে, কা’বা শরীফ প্রথম নির্মাণ করেছিলেন ফেরেশতারা। তখন পৃথিবীতে মানুষ ছিল না, ফেরেশতারা সেখানে আল্লাহর এবাদত করতেন। হযরত আদম (আ)-কে দুনিয়ায় পাঠানোর পর, আল্লাহর আদেশে তিনি কা’বার পুনর্নির্মাণ করেন এবং তাওয়াফ করেন। এই তাওয়াফ থেকেই শুরু হয় মানবজাতির হজ্জ ইতিহাস।

২. আদম (আ) থেকে ইবরাহিম (আ): হজ্জের পুনরুজ্জীবন

হযরত নূহ (আ)-এর প্লাবনের সময় কা’বা ধ্বংস হয়ে গেলে, হযরত ইবরাহিম (আ)-কে আবার কা’বা নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আ) এর সহায়তায় কা’বা নির্মাণ সম্পন্ন হয় এবং সেখান থেকেই হজ্জের নিয়মাবলি শুরু হয়।

৩. ইতিহাসে কা’বা নির্মাতা কারা ছিলেন?

ইতিহাসে বলা হয়েছে, কা’বার পুনর্নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে মোট ১১ জন বা দল যুক্ত ছিলেন: ১. ফেরেশতা, ২. হযরত আদম (আ), ৩. হযরত শীস (আ), ৪. হযরত ইবরাহিম (আ), ৫. আমালেকা সম্প্রদায়, ৬. জোরহোম গোত্র, ৭. কুসাই বিন কিলাব, ৮. কোরাইশ, ৯. হযরত আবদুল্লাহ বিন যোবায়ের (রা), ১০. হাজ্জাজ বিন ইউসুফ, ১১. সুলতান মুরাদ।

৪. হজ্জ ফরজ হয় কখন এবং কারা পালন করতে পারে?

হজ্জ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। এটি প্রতি বছর জিলহজ্জ মাসে পালিত হয় এবং প্রাপ্তবয়স্ক, আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম মুসলিমদের জন্য ফরজ। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন Latif Travels হজ্জ প্যাকেজ পেজে।

৫. হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত

হজ্জ আমাদের আত্মশুদ্ধির এক অনন্য সুযোগ। যারা হজ্জ পালন করেন, তাদের পূর্বের গুনাহ মাফ হয়ে যায় বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। এটি মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য, সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে।

৬. হজ্জের সময় ও স্থান

হজ্জ সাধারণত ৮ থেকে ১৩ জিলহজ্জ পর্যন্ত পালিত হয়। এই সময় হাজীরা মিনায় রাত যাপন, আরাফাতে দোয়া, মুযদালিফায় নামাজ আদায়সহ বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।

৭. হজ্জের দোয়াগুলোর গুরুত্ব

হযরত আদম (আ) প্রথম যে দোয়া পাঠ করেছিলেন কা’বা শরীফে, সেই দোয়ায় ছিল আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও বিশ্বাসের প্রার্থনা। ফেরেশতারাও তাওয়াফকালে পাঠ করতেন— সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার। এই দোয়াগুলো আজো হাজীরা তাওয়াফের সময় পাঠ করেন।

৮. হজ্জ ও উমরাহর মধ্যে পার্থক্য

উমরাহ হলো একটি ছোট যিয়ারত, যা বছরজুড়েই আদায় করা যায়। অপরদিকে হজ্জ নির্দিষ্ট দিনে আদায় করতে হয় এবং এটি ফরজ ইবাদত।

উপসংহার:

হজ্জের ইতিহাস কেবল ধর্মীয় নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক ভ্রমণ। আদম (আ) থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কোটি কোটি মুসলিম এই ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করছেন। আপনি যদি হজ্জ ২০২৫ এর জন্য প্রস্তুতি নিতে চান, তবে Latif Travels হজ্জ পেজ থেকে বিস্তারিত জেনে বুকিং করতে পারেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হজ্জ করার তাওফিক দিন।

লিখেছেন: রেজওয়ান আহমদ, মুয়াল্লিম – লতিফ ট্রাভেলস, সিলেট